বুধবার ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

সত্যজিৎ রায় প্রথম ভারতীয় বাঙালি, যিনি ১৯৯২ সালে সম্মানসূচক ’অস্কার’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

  |   বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   31 বার পঠিত

সত্যজিৎ রায় প্রথম ভারতীয় বাঙালি, যিনি ১৯৯২ সালে সম্মানসূচক ’অস্কার’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

সত্যজিৎ রায়, একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার। তিনি ছিলেন একাধারে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক ও সঙ্গীত পরিচালক। তিনি শুধু বাঙালি হিসেবেই নয়, ছিলেন বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকারদের একজন। যে কজন ব্যক্তির হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র বিশ্ব দরবারে পরিচিত পেয়েছে, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। তিনিই প্রথম ভারতীয় বাঙালি, যিনি ১৯৯২ সালে সম্মানসূচক ’অস্কার’ পুরস্কার পেয়েছিলেন।

সত্যজিৎ রায় ১৯২১ সালের ২ মে, কলকাতার এক শিল্প ও সাহিত্য সমাজের  বাঙ্গালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামের অধিবাসী। সত্যজিতের বাবা ছিলেন অন্যতম সেরা শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়। মা সুপ্রভা দেবী।

মাত্র তিন বছর বয়সেই সত্যজিৎ তার বাবাকে হারান।এরপর মায়ের সান্নিধ্যেই বড় হয়ে ওঠেন তিনি। চারুকলার প্রতি অনেক আগ্রহ থাকলেও ১৯৪০ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতিতে স্নাতক হন সত্যজিৎ রায়। এরপর মায়ের উৎসাহে রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান চারুকলা নিয়ে। সেখানে থাকা অবস্থাতেই ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির ওপর সত্যজিতের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোলাগা জন্মায়।

১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতায় মাত্র ৮০ টাকা বেতনে যোগ দেন ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি.জে কিমারে। সেখানে তিনি বিজ্ঞাপণ ডিজাইনের কাজ করতেন। একই সময়ে তিনি প্রকাশনা সংস্থা ‘সিগনেট প্রেস’-এর সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। এবং সেখানে তিনি প্রচুর বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন।

এসময় বিভূতিভূষণের বিখ্যাত উপন্যাস পথের পাঁচালীর একটি শিশু সংস্করণ নিয়ে কাজ করেন। এটি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি অনুপ্রাণিত হন, যা পরে তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন।

১৯৪৭ সালে তিনি ‘কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখেন। সোসাইটি সদস্য হিসেবে বিভিন্ন বিদেশী চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ হয়, যা তাকে চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করে।

১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ রায় তার বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে জন্ম নেয় আরেক গুণী ব্যক্তিত্ব সন্দ্বীপ রায়। যিনি নিজেও একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক। সে বছরই বিখ্যাত ফরাসি পরিচালক জঁ রনোয়ার তার ‘দ্য রিভার’ চলচ্চিত্রের কাজ করতে কলকাতায় আসেন। সেসময় রনোয়ারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তিনি পথের পাঁচালী নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। এবং এ কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সত্যজিতকে চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ দেন রনোয়ার।

১৯৫০ সালে বিজ্ঞাপন সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে কাজ করতে তাকে লন্ডনে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি ৯৯টি চলচ্চিত্র দেখেন। এরমধ্যে অন্যতম একটি ছিল ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র ‘লাদ্রি দি বিচেক্লেত্তে’ (সাইকেল চোর)। এই চলচ্চিত্র সত্যজিতকে খুব প্রভাবিত করেছিল। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি একজন চলচ্চিত্রকার হবেন।

সেই থেকে তিনি ’পথের পাঁচালী’ দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করে দেন। নিজের জমানো অর্থ খরচ করে ছবির শ্যুটিং শুরু করেছিলেন। আর্থিক সহায়তার অভাবে ছবিটির দৃশ্যগ্রহণ চলে দীর্ঘ তিন বছর ধরে।

পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ছবি তৈরির কাজ শেষ করেন সত্যজিৎ রায়। এবং সে বছরই তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ মুক্তি পায়। এর সংগীত পরিচালনা করেছিলেন বিখ্যাত শিল্পী পন্ডিত রবি শংকর।

তার এই চলচ্চিত্রটি কেবল জনপ্রিয়ই হয়নি, সমালোচকদের কাছে এটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়। ’পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রটি ১৯৫৬ সালের কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হবার পাশাপাশি ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়।

এরপর তিনি পথের পাঁচালীর সিকোয়েন্স হিসেবে অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯) চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ তিনটি তার ত্রয়ী চলচ্চিত্র হিসেবে বিখ্যাত হয়। এরমধ্যে অপরাজিত চলচ্চিত্রটি ভেনিসে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার অর্জন করে। এভাবে আন্তর্জাতিক মহলে সত্যজিতের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর একে একে তিনি মোট ৩৬টি ছবি পরিচালনা করেন। এর মধ্যে ২৯টি ছিল কাহিনিচিত্র, পাঁচটি তথ্যচিত্র ও দু’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি।

২০০৫ সালে তার অপু ত্রয়ী (১৯৫৫-১৯৫৯) টাইম পত্রিকার সর্বকালীন ১০০ চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান পেয়েছে। পরিচালনা ছাড়াও তিনি নিজের ও অন্যান্য পরিচালকদের ছবিতে চিত্রনাট্য রচনা এবং সুরারোপের কাজও করেছেন।

১৯৫৫ সাল থেকে নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন সত্যজিৎ রায়। ১৯৮৪ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ’দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার অর্জন করেন। পাশাপাশি সত্যজিৎ রায়কে ভারতের অসামরিক সম্মান ’ভারতরত্ন’ পদকে ভূষিত করেন ভারত সরকার। জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘অস্কার’ পান তিনি ১৯৯২ সালে।

কলকাতায় ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মাত্র একাত্তর বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান এই কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র কেবল একজন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বকেই হারায়নি, সমাপ্তি ঘটে এক বর্ণিল ইতিহাসের। বাংলা চলচ্চিত্রে যার শূন্যতা আজও পূরণ হয়নি।

Facebook Comments Box

Posted ১:২৬ পিএম | বৃহস্পতিবার, ০২ মার্চ ২০২৩

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।